মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির প্রভাবেই অবাধ ভোট হলো না--------- অভিযোগ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ১১ই জুলাই— নির্বাচনী প্রচারে মুখ্যমন্ত্রীসহ শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা যেভাবে হুমকি-সন্ত্রাসের কৌশল নিয়ে নির্বাচনী পরিবেশকে কলুষিত করেছেন, তার প্রভাবই পড়েছে প্রথম দফার নির্বাচনে। অধিকাংশ জায়গাতেই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকালে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান এবং সি পি আই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিমান বসু একথা বলেছেন। উল্লেখ্য, এদিনই রাজ্যে শুরু হয়েছে অষ্টম পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচন। প্রথম দফার পঞ্চায়েত নির্বাচনে এদিন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজ্যের জঙ্গলমহলের তিন জেলায় তৃণমূল কিভাবে সারাদিন ধরে তাণ্ডব চালিয়ে, ছাপ্পা ভোট দিয়ে, কোথাও বুথ দখল করে, বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্টদের সরিয়ে দিয়ে একতরফাভাবে ভোট করেছে, এদিন বিকালে সাংবাদিকদের সামনে তা তুলে ধরেন বিমান বসু। তিনি এদিন বলেন, আসলে যা হওয়ার ছিল তাই হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারে এতদিন ধরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে এবং তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রীরা যেভাবে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন তাতে এটাই হওয়ার ছিল। বিশেষ করে শেষপর্বে এসে যখন আদালত এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের কোনো তোয়াক্কা না করে তৃণমূলের বাইকবাহিনী সর্বত্র ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছিলো, তখন খোদ পঞ্চায়েতমন্ত্রী বললেন, কমিশনের নিষেধাজ্ঞাও থাকবে, বাইকবাহিনীও থাকবে। এর ফলে এদিন যা হওয়ার তাই হয়েছে। বাইকবাহিনী কাল রাতেও ঘুরেছে বিভিন্ন এলাকায়। বুধবার রাতে শালবনীর গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েতে বাইকবাহিনীর তাণ্ডবের খবর এসেছে। দেবগ্রাম, ছাতনি, মধুপুরে বামফ্রন্ট কর্মীদের এলাকাছাড়া করে দেওয়া হয়। দেবগ্রামে বামফ্রন্টের একজন প্রার্থীকে অপহরণ করে তৃণমূলীরা। এদিন বিকালে তাঁকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। ভয়-ভীতি, সন্ত্রাস সৃষ্টি করাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য।
বিমান বসু এদিন বলেন, যেখানে কেন্দ্রীয়বাহিনী থাকার কথা ছিল, অধিকাংশ জায়গায় তাদের সেখানে দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও কেন্দ্রীয়বাহিনীকে বুথে মোতায়েন না করে বুথ থেকে অনেক দূরে টহল দিতে দেখা গেছে। সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। এককথায় বলা যায় প্রথম দফার পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়নি। বিশেষ করে বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় সর্বত্রই এই ঘটনা ঘটেছে। তবে পুরুলিয়াতে তুলনামূলকভাবে সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু এদিন বলেন, কেন্দ্রীয়বাহিনী যথেষ্ট পরিমাণে দেওয়া হয়নি যেমন, তেমনি তাদের যথাযথভাবে বুথে মোতায়েন করাও হয়নি।
এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেন, বাঁকুড়ায় জেলা পরিষদের ৪৬টি আসনের মধ্যে ১১টিতে শাসকদলের বাহিনী কার্যত দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সর্বত্র আমাদের কর্মীদের মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। বিষ্ণুপুর, জয়পুর, কোতুলপুর, ইন্দাস, পাত্রসায়ের, তালডাংরাতে কার্যত ভোট হয়নি, শাসকদল নিজেদের খেয়ালখুশিমতো একতরফা ভোট করেছে। মেজিয়াতে ৭টি, শালতোড়াতে ৯টি, বড়জোড়াতে ১০টি সহ আরো অনেক জায়গায় বুথ দখল করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় সর্বত্র বুথ দখল হয়েছে। পিংলাতে ৩১টি, শালবনীতে ১৯টি, দাসপুরে ৩৩টি, ঘাটালে ৭৯টি বুথ দখল করা হয়েছে। ঘাটালের বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েত, যেখানে বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান, সেখানেও সবকটি বুথ দখল করে ভোট করেছে তৃণমূল। অন্যদিকে, ডেবরার ১৩টি, দাঁতন-২-এর ৪৩টি, মোহমপুরের ৩৬টি, চন্দ্রকোনা-২-এর দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সবকটি বুথ, গড়বেতা ও গোয়ালতোড়ের প্রায় ৫০টি বুথ, মেদিনীপুর সদরের ৪৩টি, বেলদার ১০টি, কেশপুরের অনেক বুথ দখল করেছে তৃণমূলের বাহিনী। কোথাও কেন্দ্রীয়বাহিনী দেখা যায়নি। সবং-এ একজন কংগ্রেস কর্মী তৃণমূলীদের আক্রমণে তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার একজন মহিলা বামফ্রন্ট কর্মীকে তৃণমূলীরা অপহরণ করতে এলে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করেন। পিংলাতে অশোক চৌধুরী নামে একজন সি পি আই (এম) নেতা তৃণমূলীদের টাঙির আক্রমণে আহত হয়েছেন। বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতেও একজন সি পি আই (এম) নেতা আহত হয়েছেন। এদিকে, পুরুলিয়া জেলাতেও থমথমে, ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে জানান বিমান বসু। তিনি বলেন, তবে সাধারণভাবে মানুষ এই জেলায় ভোট দিতে এসেছেন। ঝালদা, সাঁতুড়ি, রঘুনাথপুরে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। বড়াবাজারে একজন সি পি আই (এম) নেতা আহত হয়েছেন। বিমান বসু বলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রথম দফা নির্বাচনের গোটা বিষয়টি তুলে ধরা হবে। জেলাস্তরে পর্যবেক্ষক ও রিটার্নিং অফিসারকেও জানানো হয়েছে।
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=43572#sthash.ZGYGjztC.dpuf
No comments:
Post a Comment