WEST BENGAL ASSEMBLY ELECTIONS-2011

RE-ELECT ELECT LEFT FRONT GOVERNMENT OF WEST BENGAL FOR 8TH SUCCESSIVE TERM

Friday, July 12, 2013

CENTRAL FORCES NOT DEPLOYED IN WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTIONS

Ganashakti

কেন্দ্রীয় বাহিনী বসে রইলো
দুষ্কৃতী বাহিনী ঘুরে বেড়ালো

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ১১ই জুলাই— আদালত ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে উপেক্ষা করে পুলিস প্রশাসনকে ঠুঁটো করে রেখে প্রথম দফার ভোটগ্রহণে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরাই দাপিয়ে বেড়ালো। কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, ভোটগ্রহণের দিন সকাল থেকে বিকাল সবচেয়ে তৎপর দেখা গেলো তৃণমূলের বাইক বাহিনীকেই। আর কেন্দ্রীয় বাহিনী? তিন জেলায় প্রথম দফার ভোটগ্রহণে বেশির ভাগ বুথের আশেপাশে তাদের নিয়োগই করা হয়নি। ফলে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া জেলার বহু ব্লকে সকালের পরেই বুথ দখল করে নিয়ে ইচ্ছামতো ভোটগ্রহণ পর্ব চালাতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনীকে। 

সাতসকালেই পশ্চিম মেদিনীপুরে নিজের গ্রামে ভোট দেওয়ার পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিন, ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হোক— এটাই আমাদের কাম্য। কিন্তু অন্য কোনো কিছু নয়, নির্বাচন সেভাবেই হবে কিনা তা নির্ভর করে সরকার ও শাসকদলের মানসিকতার ওপর। সরকার না চাইলে কেন্দ্রীয় বাহিনী, কমিশন কোনো কিছু দিয়েই অবাধে ভোট হয় না।

বাস্তবে দেখাও গেলো তাই। বিকালে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতে বাধ্য হলেন, সরকার যেমন চেয়েছিলো, তেমনি ঘটলো। বাইকবাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়ে ভোট চালালো বিস্তীর্ণ এলাকায়।

আদালত এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছিলো, বাইকবাহিনী নিয়ে নির্বাচনী প্রচার বা অন্যকিছু চলবে না। সরকার অবশ্য এই নির্দেশের তোয়াক্কা করেনি। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা চলছে, বাইকবাহিনীও চলছে, এভাবেই নির্বাচন হয়ে যাবে। বাস্তবে পশ্চিম মেদিনীপুর বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার অনেক জায়গায় ভোটগ্রহণ চলাকালীন সেটাই দেখা গেছে। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে কমিশনকে হুমকি দিয়েছিলেন তারপরে কমিশনের নির্দেশ মেনে প্রশাসন কতটা ভোটগ্রহণ পরিচালনা করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় ছিলোই। এদিনও তাই তৃণমূলী দাপটে ভোটগ্রহণের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ধামসা মাদল নিয়ে জঙ্গলমহলে উন্নয়নের জন্য মানুষ ভোট দিয়েছেন। 

রাজ্য সরকারের দীর্ঘ বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজ্য নির্বাচন কমিশন আইনী লড়াই করে সুপ্রিম কোর্ট থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে সফল হয়েছে বটে। কিন্তু প্রথম দফার ভোটগ্রহণে বুথের আশপাশে তাদের বিশেষ দেখাই যায়নি। যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হয়েছিলো, সেখানেও তাদের টহল দেওয়ানো হয়েছে বুথের থেকে বহুদূরে। রাজ্য সরকারের ইচ্ছামতোই আধা সামরিক বাহিনীকে রাখা হলো সম্পূর্ণভাবেই নিষ্ক্রিয় করে। অনেক জায়গাতেই পুলিসের সামনেই অবাধে চলল বুথ দখল, সন্ত্রাস। ছিনতাই হলো ব্যালট বাক্স। আক্রান্ত প্রার্থী থেকে ভোট কর্মী, প্রিসাইডিং অফিসারও। ছিনতাই হলো ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারও। এবারের নির্বাচনে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা বেশি ছিলো। এদিন নানা জায়গা থেকে বামফ্রন্টের মহিলা প্রার্থী ও মহিলা এজেন্টদের শারীরিক লাঞ্ছনা ও নিগ্রহের খবরও পাওয়া গেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বহু বুথেই এই চিত্র। ব্যাপক পরিমাণে ছাপ্পা ভোটেরও অভিযোগ বহু এলাকায়। ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটায় পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং-এ ৩টি এবং বাঁকুড়া শালতোড়ায় ১টি বুথে পুনর্নির্বাচনের কথা ভাবছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। 

তবে মানুষের ভোটদানের উৎসাহ ও আগ্রহে ঘাটতি দেখা যায়নি। সকাল থেকেই তাঁরা ভোট দেওয়ার জন্য বুথে বুথে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অবাধ নির্বাচনের সম্ভাবনা মিলিয়ে যেতে থাকে। নির্বাচন কমিশনের হিসেবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়লো পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৬৫ শতাংশ, বাঁকুড়ায় প্রায় ৫৫ শতাংশ এবং পুরুলিয়া প্রায় ৬০ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায় বিকালের দিকে জানিয়েছেন এই তথ্য। ভোটদানের হার পরে আরো বাড়বে বলেই কমিশন মনে করছে। 

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকেই শুরু হয় তিন জেলার ভোটগ্রহণ। সকালটি এদিন মোটামুটি শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু বেলা যত বাড়তে থাকে ততই বুথগুলির আশপাশে বাড়তে থাকে বহিরাগতদের সংখ্যা। মুখ্যমন্ত্রীর ফতোয়া ছিলই যে জঙ্গলমহলে আধা সামরিক বাহিনী থাকবে, তবে বুথে নয় বাইরে টহল দেবে তারা। সেই নির্দেশ প্রশাসন পালন হয়েছে অক্ষরে অক্ষরে। তবে এদিন নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায় জানান, সাধারণভাবে ভোট নির্বিঘ্নেই হয়েছে। তবে অভিযোগও এসেছে। সেভাবে দেখতে গেলে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও এসেছে। প্রথম দফায় ৩ জেলায় বুথের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৩৮টি। কিন্তু বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাত্র ২২ শতাংশ বুথে ভোট শেষ হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা যায়। বিকাল পাঁচটার পরেও বুথে বুথে লাইন ছিলো ভোটারদের। সবং-এ ৩টি বুথে ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়েছে। এছাড়া বাঁকুড়া শালতোড়াতে ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়েছে। এই ৪টি বুথে পুনর্নিরচনের কথা বিবেচনা করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।

তিন জেলা থেকেই এদিন মারধর, সন্ত্রাসের অভিযোগ এসেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মোহনপুর, কেশপুর, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা, পিংলা, শালবনী, দাঁতন মেদিনীপুর সদরের বিস্তীর্ণ এলাকার অজস্র বুথ তৃণমূলের বাহিনী কার্যত দখল নিয়ে নেয় দুপুরের দিকে। বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে একতরফা ভোটগ্রহণ করানো হয়েছে। বুধবার রাতে শালবনীর গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বাইকবাহিনী সন্ত্রাস করে। শালবনীর দেবগ্রামেও বামফ্রন্ট প্রার্থীকে ভোটের আগের রাতে অপহরণ করেছিলো তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। পরে তাঁকে ছেড়েছে। শালবনীতে কেশপুরের দুষ্কৃতীদেরও দেখা গেছে। শালবনীর দেবগ্রাম, ছাতনি, মধুপুরে বিভিন্ন বুথে বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্টদের সকালেই মারধর করে বের করে দেয়। খড়গপুর গ্রামীণ (২) তে অসীমা ভামরি নামের বামফ্রন্টের এক মহিলা প্রার্থীকে অপহরণ করতে গেলে গ্রামবাসীরা বাধা দেন। পিংলায় দুজিপুরে অশোক চৌধুরী নামের এক সি পি আই (এম) কর্মীর মাথায় টাঙি দিয়ে আঘাত করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। সবংয়ে কংগ্রেসের এক প্রার্থী তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া তীরে আহত হয়েছেন। দীপঙ্কর ঘোষ নামের ঐ ব্যক্তিকে বুকে তীরবিদ্ধ অবস্থায় কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা করে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি পুলিস। উলটে অভিযোগকারীদেরই হেনস্তা করছে। তিন জেলাতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সবকিছুই জানানো হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে। 

পুরুলিয়াতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দূরে রেখেই ভোটগ্রহণ হয়েছে। বলরামপুর, বান্দোয়ান, বাঘমুণ্ডি ইত্যাদি এলাকার উত্তেজনাপ্রবণ বুথেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি। রাজ্য পুলিস ও কলকাতা পুলিসের বাহিনীকে দিয়েই ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। আর তাদের সামনেই কিছু কিছু এলাকায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে। তৃণমূলীদের আক্রমণে বেশ কয়েকজন সি পি আই (এম) কর্মী আহতও হয়েছেন। বরাবাজার ব্লকের পাঁজনবেড়া গ্রামের একটি বুথে পুলিস কর্মীরা ভোটারদের হেনস্তা করায় প্রতিবাদ করলে সি পি আই (এম)-র বরাবাজার জোনাল কমিটির সদস্য যুধিষ্ঠির সহিসকে পুলিস মারধর করে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। ঝালদা থানার কলমা গ্রামের একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী জহরলাল বাগদী অন্য এক ভোটারের ভোট নিজে দিয়ে দিলে তাই নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক সকাল থেকে নিজের নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বুথে বুথে ঘুরে ভয় দেখিয়ে ভোটগ্রহণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন। একসময়ে একটি বুথের প্রিসাইডিং অফিসার তাঁকে জোর করে বুথ থেকে বের করে দিতে বাধ্য হন। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইন দেখা গেছে অনেক বুথে। রঘুনাথপুর ২নম্বর ব্লকের নতুনডিহি হাইমাদ্রাসায় দুপুরে তৃণমূল কর্মীদের হামলায় কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিতে হয়েছিলো। সাতুড়িতে বেদাকাটা গ্রামে তৃণমূল কর্মীদের হামলায় দুইজন সি পি আই (এম) কর্মী আহত হয়েছেন।

বাঁকুড়াতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বিশেষ দেখা যায়নি। বিষ্ণুপুর, পাত্রসায়ের, তালডাংরা, কোতুলপুর, জয়পুর, ইন্দাস ইত্যাদি এলাকায় ব্যাপকহারে বুথ দখল করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। সকাল থেকেই বুথ থেকে বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। অনেক জায়গায় তৃণমূলের এজেন্টকে দেখিয়ে তবে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ঐ এলাকায় ভোটগ্রহণকে প্রহসন বলে উল্লেখ করে ঐ এলাকায় পুনর্নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। তবে দক্ষিণ বাঁকুড়ার অর্থাৎ জঙ্গলমহলে তুলনামূলকভাবে শান্তিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে। গঙ্গাজলঘাঁটিতে সি পি আই (এম)-র জোনাল কমিটির সদস্য অসীম পাণ্ডেকে মারধর করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। শালতোড়ায় বুথের মধ্যেই ব্যালট বাক্স ভেঙে ব্যালট পেপার ছিঁড়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। ইন্দাসে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বামফ্রন্টের প্রার্থী সান্ত্বনা বাগদী এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের বামফ্রন্ট প্রার্থী সীমা বাউড়ি এবং তাঁদের নির্বাচনী এজেন্টরা নিগৃহীত হয়েছেন তৃণমূল কর্মীদের হাতে। প্রকাশ্যে তাঁদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। বড়জোড়ায় বামফ্রন্ট প্রার্থীর এজেন্ট কল্পনা বাউড়িকেও নিগৃহীত করা হয়েছে।

- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=43569#sthash.AHm9HGIp.dpuf

No comments:

Post a Comment