A political Blog about how and why a reign of terror in West Bengal is unleashed planfully by imperialists, multinational company financed and supported Rainbow Alliance of Maoists, Naxalites,TMC, Congress, SUCI, perverted anti-Communist and anti-Leftist so-called sold-out intellectuals, corporate media and NGOs of doubtful character. Source: 'People's Democracy', 'Ganashakti’ and other Left oriented journals.
WEST BENGAL ASSEMBLY ELECTIONS-2011
RE-ELECT ELECT LEFT FRONT GOVERNMENT OF WEST BENGAL FOR 8TH SUCCESSIVE TERM
Friday, July 12, 2013
NANDIGRAM MODEL FAILS
Ganashakti
N
‘মডেল’ ভেঙে পড়ার আশঙ্কাতেই এখনও নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে অবরুদ্ধ নন্দীগ্রাম
সুদীপ্ত বসু
নন্দীগ্রাম, ১১ই জুলাই— সেদিন ভাঙাবেড়া ব্রিজ সাক্ষী ছিল, নিরীহ মহিলা-শিশুদের পুলিসের সামনে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছিল তৃণমূল-মাওবাদী জোট। হলদি নদী দিয়ে এরপর অনেক জল বয়ে গেছে।
ছ’বছর পর নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া, সেই ভাঙাবেড়া ব্রিজ, জেলিংহাম, তালপাটি খাল প্রমাণ করলো, আসলে কিছুই বদলায়নি।
তৃণমূলের দাবি, নন্দীগ্রাম ‘আন্দোলনের মডেল’। সেই ‘মডেল’ সেদিন পঙ্কজবালা সামন্তকে ছেলের পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া শরীর দেখার সুযোগ দেয়নি। আর আজ, এতদিন পরে ‘গণতন্ত্রে ভরপুর নন্দীগ্রামে’-এ এখনও সামাজিক বয়কটের ‘অভিশাপ’ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে সন্তান হারানো ওই জননীকে।
মোড়ে মোড়ে কতরকম নজরদারি পেরিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে এসে দাঁড়িয়েছিলাম ভাঙাবেড়া ব্রিজের উপরে। সেখান থেকেই দেখা গেলো, ওদিকে রাস্তার ধারে জ্বলজ্বল করে লেখা তৃণমূলী প্রার্থীর দেওয়াল লিখন, টাঙানো ফেস্টুন। প্রার্থীর নাম খোকন শিট।
আর ওই ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তেই পঙ্কজবালা সামন্তর ঘর। তাঁর আরও একটি পরিচয়। তিনি শঙ্কর সামন্তর মা। নন্দীগ্রামে নৈরাজ্যের আন্দোলনের একেবারে প্রথম পর্বে তৃণমূল-মাওবাদীদের হাতে খুন হন শঙ্কর সামন্ত। দিনটি ছিল ২০০৭ সালের ৭ই জানুয়ারি। ওইদিন সকালে তাঁর বাড়িতে জড়ো হয়েছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সশস্ত্র বাহিনী। ছিল ওই খোকন শিটও। ঘর থেকে বের করে টানতে টানতে প্রায় ২০০ মিটার দূরে নিয়ে গিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় ব্যাপক মারধর করে, কুপিয়ে তাঁর বাড়ি থেকেই লুট করে নিয়ে আসা খড়ের গাদায় আগুন জ্বালিয়ে তাতে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল শঙ্কর সামন্তকে। জঙ্গলমহলের ধরমপুরে সালকু সোরেনের মায়ের মতো সেদিন পঙ্কজবালা সামন্তও ছেলের মৃতদেহ দেখার সুযোগ পাননি।
ভাঙবেড়া ব্রিজ থেকে নেমে অনেক সন্দেহজনক চোখ এড়িয়েই মোরামের রাস্তা পেরিয়ে ঢুকতে হলো শঙ্কর সামন্তর বাড়িতে। ঘর তালাবন্ধ। গত ছ’বছরে খোলা হয়নি সেই ঘর। তাহলে কি কেউ নেই বাড়িতে? বেরিয়ে আসতে গিয়ে দেখা গেলো, পাশেই একটি ঘরের বেড়ার দরজার সামনে দাড়িয়ে রয়েছেন তিনি। আপনিই শঙ্কর সামন্তর মা? অঝোর কান্নায় মিললো উত্তর। তারপর নিজেই বললেন, আপনারা আমাদের বাড়িতে এসেছেন! চোখেমুখে বিস্ময়। কেন? পাঁচ-ছয় বছর পর কোনো ‘অতিথি’ যে পা রাখলো তাঁর দাওয়ায়।
কেন না শুভেন্দু অধিকারী থেকে শেখ সুফিয়ানদের ফতোয়া, এই বাড়িতে কেউ যেতে-আসতে পারবে না। চলছে তৃণমূলের একচ্ছত্র দাপটের নন্দীগ্রামে সামাজিক বয়কট। অনেক কথার মাঝেই সন্তানহারা ওই জননী বলছিলেন, চাষের জমি আছে, ছ’বছর বন্ধ। বাড়ির সামনে আগাছা, পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ। তবুও পরিষ্কার করার জন্য কোনো লোক পাওয়া যায় না। যে আসবে এই বাড়িতে কাজ করতে, সে আর নন্দীগ্রামে কাজ পাবে না। ‘‘কেউ দিনের আলোয় আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে না’’, বলছিলেন শঙ্কর সামন্তর মা।
একনাগাড়ে এই কথাগুলি শোনার পর আর যেন প্রশ্ন নেই। তাঁর চার ছেলে। এক ছেলের মৃত্যু হয়েছে অসুখে। বড় ছেলে শঙ্কর সামন্ত। মেজ ছেলে বাইরে রয়েছেন সংসার চালানোর তাগিদে। আর ছোট ছেলে নব সামন্ত এখন জেলে। ‘‘এখন মরণও আসে না। ছ’বছর ধরে বাড়ির বাইরে বেরোতে পারিনি’, বলে চলেন শঙ্কর সামন্তর মা।
ঘরেই দেখা মিললো শঙ্কর সামন্তর ভাইপো খেজুরির কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বরূপ সামন্তর। সেদিনের সকালের কথা মনে আছে? ‘‘হ্যাঁ। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। সেদিন সকালে ওরা যখন হামলা চালালো বাড়িতে, তখন বাকিদের বাঁচাতে নব কাকার চার বছরের মেয়েকে হাঁড়িতে চাপিয়ে তালপাটিতে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম। আমি, আমার মা সাঁতার কেটে তালপাটি পেরোই। আর ঠাকুমাকে কলার মান্দাসে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম।’’ তালপাটি পেরিয়ে সেদিন সবাই খেজুরিতে ঘরছাড়া শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আর আজ? স্বরূপ বলছিল, ‘‘জানেন কতদিন পরে আমাদের বাড়িতে কেউ এলো।’’ কিছুদিন আগে পর্যন্ত বাজারহাটেও তাঁদের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।
এই বয়কট, নজরদারির রাজনীতিই এখন তৃণমূলের সম্বল। নন্দীগ্রামে তৃণমূলের সর্বগ্রাসী দাপট। সিংহভাগ পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য। তারপরেও এত বাধা, নিষেধ, নজরদারি কেন রাখতে হচ্ছে নন্দীগ্রামকে?
উত্তর মিললো কংগ্রেস নেতা সবুজ প্রধানের কাছ থেকে। সেদিন ‘জমি আন্দোলনে’ তৃণমূলের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ‘যুদ্ধ’ করেছিলেন। ছ’বছর পরে পঞ্চায়েত ভোটের চারদিন আগে নন্দীগ্রামের কংগ্রেস নেতা বলছেন, ‘‘নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে নোংরা করে দিলো তৃণমূল। সারা দেশ জেনেছিল এই লড়াইয়ের কথা। এখন নন্দীগ্রামের কথা বলতে আমাদেরই লজ্জা হয়। তৃণমূল ছাড়া এখানে কারও কোনো স্বাধীনতা নেই।’’
নন্দীগ্রাম এখন এমনই। সোনাচূড়ার সাউদখালি অঞ্চলে তুহিন জানার মা ও দাদা দু’জনেই কংগ্রেস প্রার্থী। কংগ্রেসের কর্মী এই যুবক এদিন সকালে জানার মোড়ে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘‘দু’মিনিটের বেশি আপনার সাথে কথা বলতে পারবো না। চারদিকে অনেক চোখ রয়েছে। শুধু এটুকু জেনে রাখুন, কী অবস্থায় নন্দীগ্রামের মানুষ আছে, তা রাজ্যবাসী ভাবতেও পারবে না....।’’ বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন তিনি। সামনে দিয়ে ঠিক তখনই চারটে মোটরবাইক হু হু করে বেরিয়ে গেলো।
অদৃশ্য নজরদারি যে কতটা মারাত্মক, তা টের পাওয়া গেলো জেলিংহামে গিয়ে। জেলিংহামে ঘুরতে যাচ্ছি, এই বলেই যাওয়ার ছাড়পত্র মিলেছিল। হলদি নদীর পাড়ে এই বিস্তীর্ণ ফাঁকা জায়গাতেই সেই সময় চলেছিল তৃণমূলের সহায়তায় মাওবাদীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির। হলদিয়া থেকে রিমোটে এই জেলিংহামেই রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এখন সেই জেলিংহামের মাঠে গরু চড়ে। এখান থেকেই তৃণমূলী নেতাদের মারফত কোটি কোটি টাকার লোহার স্ক্র্যাপ চুরি করে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল।
জেলিংহামের মতোই নন্দীগ্রামের হরিপুরে ‘কৃষক মাণ্ডি’র জন্য পাঁচিল দেওয়া জমি এখন গবাদি পশুর চারণভূমি। নন্দীগ্রামে উদ্বোধন হওয়া বিদ্যুতের সাবস্টেশন মানে নির্মীয়মাণ বাড়ি ও বেশ কিছু পোস্ট। তবে বিদ্যুতের তার এখনও যুক্ত হয়নি।
আর তাই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মাটিতে এখন হুমকি, হামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে নজর ঘোরাতে চাইছে শাসকদল। আজকের নন্দীগ্রামে কোথাও সি পি আই (এম)’র পতাকা টাঙাতে দেওয়া হয়নি। বাকিদেরও একই অবস্থা। প্রকাশ্যে প্রচার তো দূরঅস্ত।
নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লকে শুধুমাত্র সি পি আই (এম) কর্মীদের বিরুদ্ধেই রয়েছে ৮৪০টি মামলা। যেমন ‘নন্দীগ্রাম মডেল’-এর মূল্য আজও গুনতে হচ্ছে প্রদীপ কাজলিকে। নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে পঞ্চায়েতের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ, আমদাবাদ গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ কাজলি ছ’বছর ধরে ঘরছাড়া। এই মুহূর্তে তাঁর নামে ৭২টি মামলা রয়েছে। কাকভোরে ঘুম থেকে উঠে বেকারিতে তৈরি রুটি দোকানে দোকানে বিক্রি করা, তারপরে হলদিয়া আদালতে গিয়ে নিয়ম করে হাজিরা দেওয়া, এই তাঁর দিনলিপি। সেখান থেকে ফিরে বিকেলে ফের টাকা তুলতে দোকানে দোকানে ঘোরা। প্রতিদিনের এই রোজনামচা। একমাত্র সন্তান রবীন কাজলি। যখন ঘর ছেড়েছিলেন, তখন সে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। এখন ভূগোলে স্নাতকোত্তর পড়ছে। ‘‘বাবাকে দেখে জেনেছি জীবন কী, বাবাই আমার কাছে লালপতাকার আকর্ষণ’’, জানালো রবীন।
হীরে-মুক্তোর থেকেও দামী এই কথাগুলিকেই এখন ভয় পান ‘নন্দীগ্রাম, জঙ্গলমহল করেছি’ বলে গর্বিত সাংসদ। ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় ২ হাজার ৭০০। কত শত নিদারুণ ঘটনা জড়িয়ে আছে ঘরছাড়া জীবনে। ছ’বছর ধরে সাউদখালির দিলীপ বেরা ঘরে ঢুকতে পারেননি। সব কিছু তছনছ হয়ে গেছে। স্ত্রী বাপের বাড়িতে। ছ’বছর ধরে যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে উন্মাদ হয়ে গেছেন। নন্দীগ্রামকে এই মূল্যও গুনতে হয়েছে।
নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে ১৪৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বামফ্রন্টের প্রার্থী ৯জন, পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টির মধ্যে ৩জন আর জেলা পরিষদের তিনটিতেই প্রার্থী দিয়েছে বামফ্রন্ট। অবিশ্বাস্য সন্ত্রাসের মধ্যেই লড়ছেন ভেকুটিয়ায় বামফ্রন্ট প্রার্থী বছর চব্বিশের সোমা মাইতি।
এদিন সোমা বললেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে লুকিয়ে প্রচার করছি, তবে শুনুন নন্দীগ্রামের মানুষ বুথ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলে তৃণমূলের দুঃখ বাড়বে।’’
তাহলে কি তাসের ঘরের মতো সাধের ‘মডেল’ ভেঙে পড়ার আশঙ্কাতেই এখনও অবরুদ্ধ নন্দীগ্রাম?
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=43573#sthash.hKSSiu38.dpuf
MAMATA ORDERS TO RIG PANCHAYAT ELECTIONS IN WEST BENGAL
মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির প্রভাবেই অবাধ ভোট হলো না--------- অভিযোগ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ১১ই জুলাই— নির্বাচনী প্রচারে মুখ্যমন্ত্রীসহ শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা যেভাবে হুমকি-সন্ত্রাসের কৌশল নিয়ে নির্বাচনী পরিবেশকে কলুষিত করেছেন, তার প্রভাবই পড়েছে প্রথম দফার নির্বাচনে। অধিকাংশ জায়গাতেই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকালে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান এবং সি পি আই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিমান বসু একথা বলেছেন। উল্লেখ্য, এদিনই রাজ্যে শুরু হয়েছে অষ্টম পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচন। প্রথম দফার পঞ্চায়েত নির্বাচনে এদিন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজ্যের জঙ্গলমহলের তিন জেলায় তৃণমূল কিভাবে সারাদিন ধরে তাণ্ডব চালিয়ে, ছাপ্পা ভোট দিয়ে, কোথাও বুথ দখল করে, বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্টদের সরিয়ে দিয়ে একতরফাভাবে ভোট করেছে, এদিন বিকালে সাংবাদিকদের সামনে তা তুলে ধরেন বিমান বসু। তিনি এদিন বলেন, আসলে যা হওয়ার ছিল তাই হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারে এতদিন ধরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে এবং তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রীরা যেভাবে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন তাতে এটাই হওয়ার ছিল। বিশেষ করে শেষপর্বে এসে যখন আদালত এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের কোনো তোয়াক্কা না করে তৃণমূলের বাইকবাহিনী সর্বত্র ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছিলো, তখন খোদ পঞ্চায়েতমন্ত্রী বললেন, কমিশনের নিষেধাজ্ঞাও থাকবে, বাইকবাহিনীও থাকবে। এর ফলে এদিন যা হওয়ার তাই হয়েছে। বাইকবাহিনী কাল রাতেও ঘুরেছে বিভিন্ন এলাকায়। বুধবার রাতে শালবনীর গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েতে বাইকবাহিনীর তাণ্ডবের খবর এসেছে। দেবগ্রাম, ছাতনি, মধুপুরে বামফ্রন্ট কর্মীদের এলাকাছাড়া করে দেওয়া হয়। দেবগ্রামে বামফ্রন্টের একজন প্রার্থীকে অপহরণ করে তৃণমূলীরা। এদিন বিকালে তাঁকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। ভয়-ভীতি, সন্ত্রাস সৃষ্টি করাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য।
বিমান বসু এদিন বলেন, যেখানে কেন্দ্রীয়বাহিনী থাকার কথা ছিল, অধিকাংশ জায়গায় তাদের সেখানে দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও কেন্দ্রীয়বাহিনীকে বুথে মোতায়েন না করে বুথ থেকে অনেক দূরে টহল দিতে দেখা গেছে। সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। এককথায় বলা যায় প্রথম দফার পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়নি। বিশেষ করে বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় সর্বত্রই এই ঘটনা ঘটেছে। তবে পুরুলিয়াতে তুলনামূলকভাবে সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু এদিন বলেন, কেন্দ্রীয়বাহিনী যথেষ্ট পরিমাণে দেওয়া হয়নি যেমন, তেমনি তাদের যথাযথভাবে বুথে মোতায়েন করাও হয়নি।
এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেন, বাঁকুড়ায় জেলা পরিষদের ৪৬টি আসনের মধ্যে ১১টিতে শাসকদলের বাহিনী কার্যত দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সর্বত্র আমাদের কর্মীদের মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। বিষ্ণুপুর, জয়পুর, কোতুলপুর, ইন্দাস, পাত্রসায়ের, তালডাংরাতে কার্যত ভোট হয়নি, শাসকদল নিজেদের খেয়ালখুশিমতো একতরফা ভোট করেছে। মেজিয়াতে ৭টি, শালতোড়াতে ৯টি, বড়জোড়াতে ১০টি সহ আরো অনেক জায়গায় বুথ দখল করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় সর্বত্র বুথ দখল হয়েছে। পিংলাতে ৩১টি, শালবনীতে ১৯টি, দাসপুরে ৩৩টি, ঘাটালে ৭৯টি বুথ দখল করা হয়েছে। ঘাটালের বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েত, যেখানে বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান, সেখানেও সবকটি বুথ দখল করে ভোট করেছে তৃণমূল। অন্যদিকে, ডেবরার ১৩টি, দাঁতন-২-এর ৪৩টি, মোহমপুরের ৩৬টি, চন্দ্রকোনা-২-এর দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সবকটি বুথ, গড়বেতা ও গোয়ালতোড়ের প্রায় ৫০টি বুথ, মেদিনীপুর সদরের ৪৩টি, বেলদার ১০টি, কেশপুরের অনেক বুথ দখল করেছে তৃণমূলের বাহিনী। কোথাও কেন্দ্রীয়বাহিনী দেখা যায়নি। সবং-এ একজন কংগ্রেস কর্মী তৃণমূলীদের আক্রমণে তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার একজন মহিলা বামফ্রন্ট কর্মীকে তৃণমূলীরা অপহরণ করতে এলে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করেন। পিংলাতে অশোক চৌধুরী নামে একজন সি পি আই (এম) নেতা তৃণমূলীদের টাঙির আক্রমণে আহত হয়েছেন। বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতেও একজন সি পি আই (এম) নেতা আহত হয়েছেন। এদিকে, পুরুলিয়া জেলাতেও থমথমে, ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে জানান বিমান বসু। তিনি বলেন, তবে সাধারণভাবে মানুষ এই জেলায় ভোট দিতে এসেছেন। ঝালদা, সাঁতুড়ি, রঘুনাথপুরে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। বড়াবাজারে একজন সি পি আই (এম) নেতা আহত হয়েছেন। বিমান বসু বলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রথম দফা নির্বাচনের গোটা বিষয়টি তুলে ধরা হবে। জেলাস্তরে পর্যবেক্ষক ও রিটার্নিং অফিসারকেও জানানো হয়েছে।
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=43572#sthash.ZGYGjztC.dpuf
PANCHAYAT ELECTION IN WEST BENGAL: ঘেরাটোপ, দেদার ছাপ্পার মুখেও লড়ে গেলো জঙ্গলমহলের গ্রাম
Ganashakti
চন্দন দাস
ঝাড়গ্রাম, ১১ই জুলাই — ছবি-(১), দুপুর ১২টা। মাওবাদী নেতা সিধু সরেনের ভাঙা শহীদবেদীর উপর দু’ পা তুলে বসেছিল অনন্য মাহাতো। উলটো দিকেই সেই চায়ের দোকান, যেখানে পাঁচজন সি পি আই (এম) কর্মীকে খুন করেছিল কিষানজীর দলবল। অনন্য জনসাধারণের কমিটির সংগঠক ছিল তখন। এখন ‘দিদি’-র ভক্ত। এদিন রামেশ্বরপুরে সিধুর শহীদ বেদীর উপর বসে বললেন,‘‘এখানে আমরা সবাই তৃণমূল। মাওবাদীরা ছিল। গেছে। সি পি এম-র সব ঘরছাড়া। জোড়াফুল ছাড়া কিছু দেখতে পাচ্ছেন?’’
ঠিক তাই। রামেশ্বরপুর, হাতিলোট, দাসপুর — লক্ষ্মণপুরের জঙ্গলঘেরা শালবনীর এই একদা মাওবাদীদের নিশ্চিন্ত ডেরাগুলিতে এখন ঘাসফুলের অবাধ চাষ। কাছেই, চাষের জমির পাশে, যে স্কুলের চৌহদ্দিতে দাঁড়িয়ে সুজন মাহাতো প্রথমবার ভাষণরত কিষানজীকে দেখেছিলেন, সেখানে, রামেশ্বরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট হচ্ছিল। বাইরে তৃণমূলীদের দেদার ভিড়। তখনই ভোট দিয়ে ফিরে বছর পঁয়তাল্লিশের সুজন মাহাতো টানতে টানতে নিয়ে গেলেন একটি নির্মীয়মাণ একতলা বাড়ির সামনে। তারপর, তার সামনে দাঁড়িয়ে বর্তমানে তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী সুজন গর্বিত ভঙ্গিতে বললেন,‘‘এই বাড়ি কিষানজী তৈরি করাচ্ছিলেন। আমি এটা বানাতে কাজ করেছি।’’
ছবি-(২), দুপুর সওয়া ১১টা। কী ভাবছেন? মাওবাদীদের অবাধ দৌরাত্ম্যের এলাকাগুলিতে তৃণমূলের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার বিবরণ লিখছি? একদম ঠিক। জঙ্গলমহলের এবারের ভোট প্রমাণ — যেখানে মাওবাদীরা ঘাঁটি গেড়েছিল, সেখানেই শেষ পর্যন্ত লালপতাকার সাময়িক সর্বনাশ করে মমতা ব্যানার্জির বাড়বাড়ন্তর পাকা সড়ক বানিয়ে দিয়ে গেছে মাওবাদীরা। লালগড়ের পূর্ণাপানি একটি উদাহরণ। এখানে বুথ দখল করেছে তৃণমূল। আর ধরমপুর — যেখানকার নেতা অনুজ পাণ্ডেকে ঘিরে এত ছিছিক্কার মিডিয়া, তৃণমূলের, সেখানে তৃণমূল, সি পি আই (এম) অবাধে বুথ অফিস করেছে, মানুষ ভোট দিয়েছেন। বাঁধগড়ার আল্পনা মাহাতো নিজের নাম জানতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের বুথ অফিসে। তৃণমূল তাঁকে বামফ্রন্টের সমর্থক ভেবে নিয়ে বলেছে তোমার নাম নেই। আল্পনা এসেছেন বামফ্রন্টের বুথ অফিসে। বামফ্রন্ট কর্মীরা তাঁর নাম খুঁজে, হাতে স্লিপ ধরিয়ে পাঠিয়েছেন ধরমপুর স্টেট প্ল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
ছবি-(৩), বিকাল সাড়ে ৫টা। গড়বেতা-১ নং ব্লকের জুনশোল প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি আমলাগোড়া পঞ্চায়েতের মধ্যে। বুথের মধ্যে এক তৃণমূল কর্মী আর ধৈর্য ধরতে পারলেন না। একটি একটি ব্যালট ছেঁড়ার বদলে পুরো ব্যালট বইটিই ব্যাঙ্কের চেক বইয়ের মতো টেবিলের উপর রেখে পরপর ছাপ মারা শুরু করে দিলেন। ৭টা পর্যন্ত এমন চললো। কেন? কারণ ঐ বুথে দুপুর ৩টের পর আর গ্রামবাসীরা ভোট দিতে যাননি। কারণ, বুথের মধ্যে গোপনে ছাপ দেওয়ার জায়গায় এক তৃণমূল কর্মী দাঁড়িয়েছিলেন। সেই বীরপুঙ্গবকে দেখিয়ে ছাপ মারতে হচ্ছিল গ্রামবাসীদের। প্রিসাইডিং অফিসার, ভোটকমীরা বসেছিলেন ভ্যাবলার মতো। অবস্থা দেখে গ্রামবাসীরা আর ঐ প্রহসন কেন্দ্রের দিকে এগোননি। এমন ঘটনা কেশপুর, গড়বেতা, পিংলা, দাঁতনের বেশ কিছু জায়গায় হয়েছে এদিন।
ছবি-(৪), দুপুর ১টা। এবার জাগতার সিংয়ের সঙ্গে আলাপচারিতা। অধিকাংশ পাঞ্জাবীদের মতো দিলদরিয়া মানুষ। বৃহস্পতিবারই বোঝা গিয়েছিল আধা সামরিক বাহিনীর হাল মমতা ব্যানার্জি কী বানাবেন। তাই হয়েছে। জাগতার সিং কী বলছেন শুনুন। কাঁটাপাহাড়ির ন্যাড়চার যে বুথে তৃণমূলের স্বার্থে মাওবাদীদের ‘ভোট বয়কট’-র ডাকে ২০০৯-র লোকসভা ভোটে একটিও ভোট পড়েনি, সেখানে এবার বিরাট লাইন। কাছেই মাওবাদী নেতা, নিহত লালমোহন টুডুর বাড়ি। তবে লালমোহন এখন প্রায় ভুলতে বসা একটি আবছা লোক — লোকটা যে একটা ‘বিরাট বিপ্লব’-র নামে পার্ক স্ট্রিটে গিয়ে হাঙ্গামা করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছিল — কে বলবে? কেউ তাঁর কথা বলছেও না। সেখানে ন্যাড়চা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন সি আর পি এফ-র ৫০ নং ব্যাটেলিয়নের এ এস আই জাগতার সিং। বললেন,‘‘চাকরি জীবনে এই প্রথম ভোট হলো আমার, যেখানে আমার কিছুই করার নেই। গাড়ি করে ঘুরে বেড়ানো আর রাস্তায় একটু হাঁটাচলা করা ছাড়া। বুথে দায়িত্ব নেই — এই প্রথম!’’ লালগড় থেকে রামগড়, বাঁশপাহাড়ি থেকে দহিঝুড়ি, ভীমপুর থেকে পীড়াকাটা — জঙ্গলমহলে সবচেয়ে বিপজ্জনক এই এলাকাগুলিতে এদিন আধা সামরিকবাহিনী মূলত জঙ্গলের শোভা, বৃষ্টির মাধুরী আর মানুষের আসা যাওয়া দেখে বিলকুল কাটিয়ে দিয়েছে। ধরমপুরে একটি সেতুর উপর দেখা রাজ্য পুলিসের এক এ এস আই যুবরাজ সরকারের সঙ্গে। বারাকপুর থেকে আসা রাজ্য পুলিসের ৬নং ব্যাটেলিয়নের এই কর্মীর দায়িত্বে ছিলেন আধা সামরিক বাহিনীর চারজন। এক জওয়ানকে প্রশ্ন করতেই রীতিমত হা হা করে ছুটে এলেন যুবরাজ। জীবনে বড়জোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নিরামিষ পোস্টিং পাওয়া যুবরাজ বললেন,‘‘আমাদের কাজ শুধু এই সেতুর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করা। গোলমাল হলে ছুটে যাওয়া আমাদের কাজ নয়। এরা আমার আন্ডারে।’’
স্পষ্ট যে — আধা সামরিক বাহিনীকে রাজ্য সরকারের ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা ছিল এদিনের ভোটের আর একটি বৈশিষ্ট্য।
ছবি-(৫), রাত ৯টা। কেশিয়াড়ির বেগমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তখনও ভোট চলছে। বুথের বাইরে প্রায় দুশো মানুষ। হঠাৎই তৃণমূল কর্মীরা বুথের ভিতর ঢুকে ভোট দেওয়া শুরু করে দিলেন। চললো ছাপ্পা। বাইরে অধীর ভোটদাতাদের চিৎকার। এমন ঘটনা যত রাত বেড়েছে, মমতা ব্যানার্জির পাঠানো ভোট কর্মী, প্রিসাইডিং অফিসারদের একাংশের কৌশলে ঘটেছে বিনপুর-২ নং ব্লকের এড়গোদা প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ঘটেছে আরো কিছু জায়গায়।
কাঁকোর বড়াশুলি, কোরকোরা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির বুথে বামফ্রন্টের ভোটদাতাদের আটকানোর চেষ্টা করেছে তৃণমূল। কিছুটা সফল হয়েছে — কিন্তু পুরোটা নয়। ফলে যেখানে দলবল আছে, জঙ্গলমহলের সেখানেও বুথ দখল, ভয় দেখানো, মারধর, গ্রামবাসীদের আটকে রেখেছে তৃণমূল। বাইকবাহিনী প্রায় সর্বত্র গ্রামে গ্রামে ভয় দেখিয়েছে ভোটদাতাদের। তেমনই একটি বাইকবাহিনী গোয়ালডাঙ্গার কাছে এক গ্রামবাসীকে ধাক্কা মেরেছে। পুলিস বাইক আটক করেছে। তৃণমূলের কর্মী বুঝে ছেড়েও দিয়েছে। ধরমপুরের দামুজানায় সি পি আই(এম)-র এজেন্ট বিভূতি চালককে বেপরোয়া মারধর করেছে শাসক দল। তবে ওখানেই গ্রামবাসী মহিলারা তৃণমূলের কর্মীদের এমন দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদও করেছে। চন্দ্রকোনা টাউনে বামফ্রন্ট প্রার্থী স্বপন মূর্মু প্রহৃত হয়েছেন।
তাছাড়া সদর ব্লকের কর্ণগড়, ধরমপুরের দামুজানা, বৈতার পলাশীতে গ্রামবাসীদের আটকে, বুথ জ্যাম করে জেতার চেষ্টা করেছে তৃণমূল। গোপীবল্লভপুরের ৯৮টি বুথের মধ্যে ৩০টি বুথ বিলকুল দখল করে নিয়েছে প্রাক্তন মাওবাদী, বর্তমানে তৃণমূলের কর্মীরা। ঐ ব্লকের তপসিয়া পঞ্চায়েতের কেন্দুয়ানা সংসদে সি পি আই(এম) প্রার্থী টোকন মুর্মুকে বেধড়ক মারধর করেছে তৃণমূল কর্মীরা। নয়াগ্রামেও গড়কেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বারিকাপল্লী প্রভৃতি জায়গায় তৃণমূল বুথ দখল করে নেয় দুপুর ১টা নাগাদ। দেদার ছাপ্পা ভোট পড়েছে কেশপুর, গড়বেতার তিনটি ব্লকে, পিংলায়, ডেবরায়, দাঁতনে। গোপীবল্লভপুরের চর্চিতার এক সি পি আই(এম-এল) প্রার্থী জলেশ্বর বেরাকে মারধর করে তৃণমূল কর্মীরা।
বামফ্রন্ট কর্মীরা তবে কী করলেন? তাঁরা করেছেন তাঁদের কাজ, মাথা ঠাণ্ডা রেখে। বাঁশপাহাড়ির সমীর মাহাতো, মাণিকপাড়ার মহাশিস, ধরমপুরের বিনয় পাণ্ডে, গোপীবল্লভপুরের বিশ্বরঞ্জন – সবার মুখ রাত ৯টাতেও টানটান। তৃণমূল জখন বুথ দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে, এরা প্রত্যেকে বুথের দূরে দাঁড়িয়ে। একটিই লক্ষ্য। কী? চারজনেরই জবাব —‘‘আমাদের ভোটদাতাদের বুথের ভিতর পৌঁছে না দিয়ে ছাড়ছি না ময়দান। দেখি ওরা আর কী করে?’’
এটি ভোটপর্বের শেষ ছবি। কিন্তু আসলে ভোটপর্বের মূল ছবি।
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=43571#sthash.oJqO7zdC.dpuf
CENTRAL FORCES NOT DEPLOYED IN WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTIONS
Ganashakti
কেন্দ্রীয় বাহিনী বসে রইলোদুষ্কৃতী বাহিনী ঘুরে বেড়ালো
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ১১ই জুলাই— আদালত ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে উপেক্ষা করে পুলিস প্রশাসনকে ঠুঁটো করে রেখে প্রথম দফার ভোটগ্রহণে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরাই দাপিয়ে বেড়ালো। কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, ভোটগ্রহণের দিন সকাল থেকে বিকাল সবচেয়ে তৎপর দেখা গেলো তৃণমূলের বাইক বাহিনীকেই। আর কেন্দ্রীয় বাহিনী? তিন জেলায় প্রথম দফার ভোটগ্রহণে বেশির ভাগ বুথের আশেপাশে তাদের নিয়োগই করা হয়নি। ফলে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া জেলার বহু ব্লকে সকালের পরেই বুথ দখল করে নিয়ে ইচ্ছামতো ভোটগ্রহণ পর্ব চালাতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনীকে।
সাতসকালেই পশ্চিম মেদিনীপুরে নিজের গ্রামে ভোট দেওয়ার পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিন, ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হোক— এটাই আমাদের কাম্য। কিন্তু অন্য কোনো কিছু নয়, নির্বাচন সেভাবেই হবে কিনা তা নির্ভর করে সরকার ও শাসকদলের মানসিকতার ওপর। সরকার না চাইলে কেন্দ্রীয় বাহিনী, কমিশন কোনো কিছু দিয়েই অবাধে ভোট হয় না।
বাস্তবে দেখাও গেলো তাই। বিকালে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতে বাধ্য হলেন, সরকার যেমন চেয়েছিলো, তেমনি ঘটলো। বাইকবাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়ে ভোট চালালো বিস্তীর্ণ এলাকায়।
আদালত এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছিলো, বাইকবাহিনী নিয়ে নির্বাচনী প্রচার বা অন্যকিছু চলবে না। সরকার অবশ্য এই নির্দেশের তোয়াক্কা করেনি। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা চলছে, বাইকবাহিনীও চলছে, এভাবেই নির্বাচন হয়ে যাবে। বাস্তবে পশ্চিম মেদিনীপুর বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার অনেক জায়গায় ভোটগ্রহণ চলাকালীন সেটাই দেখা গেছে। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে কমিশনকে হুমকি দিয়েছিলেন তারপরে কমিশনের নির্দেশ মেনে প্রশাসন কতটা ভোটগ্রহণ পরিচালনা করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় ছিলোই। এদিনও তাই তৃণমূলী দাপটে ভোটগ্রহণের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ধামসা মাদল নিয়ে জঙ্গলমহলে উন্নয়নের জন্য মানুষ ভোট দিয়েছেন।
রাজ্য সরকারের দীর্ঘ বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজ্য নির্বাচন কমিশন আইনী লড়াই করে সুপ্রিম কোর্ট থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে সফল হয়েছে বটে। কিন্তু প্রথম দফার ভোটগ্রহণে বুথের আশপাশে তাদের বিশেষ দেখাই যায়নি। যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হয়েছিলো, সেখানেও তাদের টহল দেওয়ানো হয়েছে বুথের থেকে বহুদূরে। রাজ্য সরকারের ইচ্ছামতোই আধা সামরিক বাহিনীকে রাখা হলো সম্পূর্ণভাবেই নিষ্ক্রিয় করে। অনেক জায়গাতেই পুলিসের সামনেই অবাধে চলল বুথ দখল, সন্ত্রাস। ছিনতাই হলো ব্যালট বাক্স। আক্রান্ত প্রার্থী থেকে ভোট কর্মী, প্রিসাইডিং অফিসারও। ছিনতাই হলো ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারও। এবারের নির্বাচনে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা বেশি ছিলো। এদিন নানা জায়গা থেকে বামফ্রন্টের মহিলা প্রার্থী ও মহিলা এজেন্টদের শারীরিক লাঞ্ছনা ও নিগ্রহের খবরও পাওয়া গেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বহু বুথেই এই চিত্র। ব্যাপক পরিমাণে ছাপ্পা ভোটেরও অভিযোগ বহু এলাকায়। ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটায় পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং-এ ৩টি এবং বাঁকুড়া শালতোড়ায় ১টি বুথে পুনর্নির্বাচনের কথা ভাবছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
তবে মানুষের ভোটদানের উৎসাহ ও আগ্রহে ঘাটতি দেখা যায়নি। সকাল থেকেই তাঁরা ভোট দেওয়ার জন্য বুথে বুথে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অবাধ নির্বাচনের সম্ভাবনা মিলিয়ে যেতে থাকে। নির্বাচন কমিশনের হিসেবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়লো পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৬৫ শতাংশ, বাঁকুড়ায় প্রায় ৫৫ শতাংশ এবং পুরুলিয়া প্রায় ৬০ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায় বিকালের দিকে জানিয়েছেন এই তথ্য। ভোটদানের হার পরে আরো বাড়বে বলেই কমিশন মনে করছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকেই শুরু হয় তিন জেলার ভোটগ্রহণ। সকালটি এদিন মোটামুটি শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু বেলা যত বাড়তে থাকে ততই বুথগুলির আশপাশে বাড়তে থাকে বহিরাগতদের সংখ্যা। মুখ্যমন্ত্রীর ফতোয়া ছিলই যে জঙ্গলমহলে আধা সামরিক বাহিনী থাকবে, তবে বুথে নয় বাইরে টহল দেবে তারা। সেই নির্দেশ প্রশাসন পালন হয়েছে অক্ষরে অক্ষরে। তবে এদিন নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায় জানান, সাধারণভাবে ভোট নির্বিঘ্নেই হয়েছে। তবে অভিযোগও এসেছে। সেভাবে দেখতে গেলে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও এসেছে। প্রথম দফায় ৩ জেলায় বুথের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৩৮টি। কিন্তু বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাত্র ২২ শতাংশ বুথে ভোট শেষ হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা যায়। বিকাল পাঁচটার পরেও বুথে বুথে লাইন ছিলো ভোটারদের। সবং-এ ৩টি বুথে ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়েছে। এছাড়া বাঁকুড়া শালতোড়াতে ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়েছে। এই ৪টি বুথে পুনর্নিরচনের কথা বিবেচনা করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
তিন জেলা থেকেই এদিন মারধর, সন্ত্রাসের অভিযোগ এসেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মোহনপুর, কেশপুর, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা, পিংলা, শালবনী, দাঁতন মেদিনীপুর সদরের বিস্তীর্ণ এলাকার অজস্র বুথ তৃণমূলের বাহিনী কার্যত দখল নিয়ে নেয় দুপুরের দিকে। বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে একতরফা ভোটগ্রহণ করানো হয়েছে। বুধবার রাতে শালবনীর গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বাইকবাহিনী সন্ত্রাস করে। শালবনীর দেবগ্রামেও বামফ্রন্ট প্রার্থীকে ভোটের আগের রাতে অপহরণ করেছিলো তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। পরে তাঁকে ছেড়েছে। শালবনীতে কেশপুরের দুষ্কৃতীদেরও দেখা গেছে। শালবনীর দেবগ্রাম, ছাতনি, মধুপুরে বিভিন্ন বুথে বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্টদের সকালেই মারধর করে বের করে দেয়। খড়গপুর গ্রামীণ (২) তে অসীমা ভামরি নামের বামফ্রন্টের এক মহিলা প্রার্থীকে অপহরণ করতে গেলে গ্রামবাসীরা বাধা দেন। পিংলায় দুজিপুরে অশোক চৌধুরী নামের এক সি পি আই (এম) কর্মীর মাথায় টাঙি দিয়ে আঘাত করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। সবংয়ে কংগ্রেসের এক প্রার্থী তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া তীরে আহত হয়েছেন। দীপঙ্কর ঘোষ নামের ঐ ব্যক্তিকে বুকে তীরবিদ্ধ অবস্থায় কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা করে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি পুলিস। উলটে অভিযোগকারীদেরই হেনস্তা করছে। তিন জেলাতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সবকিছুই জানানো হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।
পুরুলিয়াতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দূরে রেখেই ভোটগ্রহণ হয়েছে। বলরামপুর, বান্দোয়ান, বাঘমুণ্ডি ইত্যাদি এলাকার উত্তেজনাপ্রবণ বুথেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি। রাজ্য পুলিস ও কলকাতা পুলিসের বাহিনীকে দিয়েই ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। আর তাদের সামনেই কিছু কিছু এলাকায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে। তৃণমূলীদের আক্রমণে বেশ কয়েকজন সি পি আই (এম) কর্মী আহতও হয়েছেন। বরাবাজার ব্লকের পাঁজনবেড়া গ্রামের একটি বুথে পুলিস কর্মীরা ভোটারদের হেনস্তা করায় প্রতিবাদ করলে সি পি আই (এম)-র বরাবাজার জোনাল কমিটির সদস্য যুধিষ্ঠির সহিসকে পুলিস মারধর করে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। ঝালদা থানার কলমা গ্রামের একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী জহরলাল বাগদী অন্য এক ভোটারের ভোট নিজে দিয়ে দিলে তাই নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক সকাল থেকে নিজের নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বুথে বুথে ঘুরে ভয় দেখিয়ে ভোটগ্রহণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন। একসময়ে একটি বুথের প্রিসাইডিং অফিসার তাঁকে জোর করে বুথ থেকে বের করে দিতে বাধ্য হন। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইন দেখা গেছে অনেক বুথে। রঘুনাথপুর ২নম্বর ব্লকের নতুনডিহি হাইমাদ্রাসায় দুপুরে তৃণমূল কর্মীদের হামলায় কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিতে হয়েছিলো। সাতুড়িতে বেদাকাটা গ্রামে তৃণমূল কর্মীদের হামলায় দুইজন সি পি আই (এম) কর্মী আহত হয়েছেন।
বাঁকুড়াতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বিশেষ দেখা যায়নি। বিষ্ণুপুর, পাত্রসায়ের, তালডাংরা, কোতুলপুর, জয়পুর, ইন্দাস ইত্যাদি এলাকায় ব্যাপকহারে বুথ দখল করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। সকাল থেকেই বুথ থেকে বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। অনেক জায়গায় তৃণমূলের এজেন্টকে দেখিয়ে তবে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ঐ এলাকায় ভোটগ্রহণকে প্রহসন বলে উল্লেখ করে ঐ এলাকায় পুনর্নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। তবে দক্ষিণ বাঁকুড়ার অর্থাৎ জঙ্গলমহলে তুলনামূলকভাবে শান্তিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে। গঙ্গাজলঘাঁটিতে সি পি আই (এম)-র জোনাল কমিটির সদস্য অসীম পাণ্ডেকে মারধর করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। শালতোড়ায় বুথের মধ্যেই ব্যালট বাক্স ভেঙে ব্যালট পেপার ছিঁড়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। ইন্দাসে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বামফ্রন্টের প্রার্থী সান্ত্বনা বাগদী এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের বামফ্রন্ট প্রার্থী সীমা বাউড়ি এবং তাঁদের নির্বাচনী এজেন্টরা নিগৃহীত হয়েছেন তৃণমূল কর্মীদের হাতে। প্রকাশ্যে তাঁদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। বড়জোড়ায় বামফ্রন্ট প্রার্থীর এজেন্ট কল্পনা বাউড়িকেও নিগৃহীত করা হয়েছে।
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=43569#sthash.AHm9HGIp.dpuf
বাঁকুড়ায় জেলা পরিষদের্ ১০ আসনে বুথ দখল
Ganashakti
বাঁকুড়ায় জেলা পরিষদের্ ১০ আসনে বুথ দখল
মধুসূদন চ্যাটার্জি
বাঁকুড়া, ১১ই জুলাই — যা আশঙ্কা করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার বাস্তবে তাই ঘটলো বাঁকুড়া জেলার একটি বড় অংশে। এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার বিষ্ণুপুর, জয়পুর, কোতুলপুর, পাত্রসায়র এবং ইন্দাস ও তালডাংরার একাংশের বুথগুলি দখল করে ছাপ্পা ভোট দিলো তৃণমূলবাহিনী। এই ৬টি ব্লকে জেলা পরিষদের ১৩টি আসন আছে। ১০টি আসন এলাকাই তৃণমূলীদের কবজায় চলে যায় দুপুর ১২টার মধ্যে। এছাড়া বড়জোড়ার ১০টি, মেজিয়ার ৫টি, বাঁকুড়া ২নং ব্লকের ৫টি, রানীবাঁধের ১টি, খাতড়ার ১টি, শালতোড়ার ৫টি, ওন্দার রতনপুর এলাকা তৃণমূলীদের দখলে চলে যায়। পুলিসবাহিনীর উপস্থিতিতেই চলে ছাপ্পা ভোট।
এদিন দুপুরের শালতোড়ার ঢেকো অঞ্চলের গোস্বামীডিহি বুথে তৃণমূলবাহিনী ঢুকে ব্যালট বাক্স লুট করে পুলিসও সরকারী ভোট কর্মীদের সামনে ভেঙে ব্যালট পেপারগুলি ছিঁড়ে দেয়। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতীও এই ছিনতাই এর ঘটনা স্বীকার করেছেন। তৃণমূলীদের দখল করে নেওয়া ঐ জেলা পরিষদের আসনগুলির মধ্যে ১০টিসহ কিছু এলাকায় পুনঃনির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে। এদিন বিকালে সাংবাদিক সম্মেলনে এখবর জানান জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অমিয় পাত্র।
অন্যদিকে, জেলার দক্ষিণাংশে জঙ্গলমহলে অদম্য জেদ, ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে মানুষ ভোটে অংশ নিলেন। রানীবাঁধের আঘঘুটা, খাতড়ার মুড়াগ্রাম ও সারেঙ্গার মাকড়কোল ছাড়া কোথাও জবরদখল করতে পারেনি তৃণমূলবাহিনী। জঙ্গলমহল রানীবাঁধ, হিড়বাঁধ, সিমলাপাল, রাইপুর, সারেঙ্গা, খাতড়ার বিস্তৃণ অঞ্চলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ ভোট দিয়েছেন। জেলায় ৩৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও দক্ষিণ বাঁকুড়ার হাতেগোনা ৫/১০টা বুথ ছাড়া কোথাও কেন্দ্রীয়বাহিনীকে দেখা যায়নি।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে অমিয় পাত্র বলেন, ৮ই জুলাই জেলার সর্বদলীয় সভায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ৯ তারিখে নির্ধারিত সময়ের পর কেউ প্রচার করতে পারবে না। কিন্তু প্রচারের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ঐদিন তৃণমূলের মোটর সাইকেলবাহিনী জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়। ছড়ানো হয় প্রবল হুমকি। ঐ সভাতেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, কেন্দ্রীয়বাহিনীকে বিভিন্ন জায়গা টহলের কাজে লাগানো হবে। কিন্তু ৩দিন ধরে কেন্দ্রীয়বাহিনীকে বসিয়ে রাখা হলো, কোন টহল হলো না। অমিয় পাত্র জানান যে আমরা তখনই বুঝেছি যে বৃহস্পতিবারের ভোটটা সম্পূর্ণ প্রহসনে পরিণত হবে। তবে এই অবস্থার মধ্যেও দক্ষিণ বাঁকুড়ার মানুষ অদম্য জেদ নিয়ে সকাল থেকেই ভোটে নেমেছিলেন। বুধবার রাতেই রানীবাঁধের রাজাকাটা অঞ্চলের আঘঘুটা বুথের বেশিরভাগ ভোটারেরই সচিত্র পরিচয়পত্র কেড়ে নেয় তৃণমূলবাহিনী। পুলিস, জেলাশাসক, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সকলকে রাতেই বিষয়টি জানানো হয় কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বুথটি সম্পূর্ণ তৃণমূলবাহিনীর দখলে চলে গেছে। তবে এদিন খাতড়া মুসলিমপাড়াতেও মানুষের ভোট দেওয়ার দৃশ্য ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। মহিলা-পুরুষরা দলবেঁধে ভোট দেন। রানীবাঁধ থানার ঝিলিমিলি, বারিকুল, সাতনালাতে, মাজগেড়িয়াসহ পুরো আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় এদিন ভোট একটা উৎসব আকার নেয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে জঙ্গলমহলের রাইপুর, সিমলাপালের মানুষও ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে মেজিয়ার বুকে কয়েকদিন ধরেই প্রবল সন্ত্রাস নামিয়ে আনে। দামোদরেরও পাড় থেকে মাফিয়াবাহিনী এসে আক্রমণ শানায়। এদিন তৃণমূলীদের হাত থেকে রেহাই পাননি ইন্দাস পঞ্চায়েত সমিতির বামফ্রন্টের মহিলা প্রার্থী শান্ত্বনা বাগদী ও গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী সীমা বাউড়ি, নির্বচনী এজেন্ট বিশ্বজিৎ বাগদী, পাঁচমুড়ার আধকড়া বুথের বামফ্রন্টের প্রার্থী নীলিমা রুইদাসও। এদিন বড়জোড়ার তাজপুরে বামফ্রন্টের প্রার্থী তরুণ বাউড়ি ও এজেন্ট কল্পনা বাউড়িকে প্রচণ্ড প্রহার করা হয়। বড়জোড়ারই ভৈরবপুরে বামফ্রন্টের প্রার্থী দিলীপ মণ্ডলকে মারধর করে। শান্তিনগরে আরও দুই সি পি আই (এম) কর্মীকে আহত করে চারটি ঘর ভাঙে তৃণমূলীরা। এদিন গঙ্গাজলঘাটিতে সি পি আই (এম) নেতা অসিম পাণ্ডে ও তার ছেলেকেও প্রহার করে তৃণমূলবাহিনী। এদিন তাজপুরের পুরাকেন্দা ও বাগদীপাড়ায় ভোটারদের অবরোধ করে পুরো ছাপ্পা ভোট মারে তৃণমূলবাহিনী। এখানকার এক মহিলা ভোটার ভোট দিতে এলে গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্যালটটি কেড়ে নেয় তৃণমূলীরা। ভোট দিতে পারেন না। এই ঘটনার প্রতিবাদে তিনি বাকি পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ পদে কোন ভোট দেননি।
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=43570#sthash.Tp06sHFV.dpuf
Subscribe to:
Posts (Atom)